নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া ::
যোগদানের এক মাসেই পঞ্চাশোর্ধ বয়সী আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত ছাড়া ধর্ষণ মামলা রুজু, যুবলীগ নেতাসহ ব্যবসায়ীদের কান ধরে ওঠবস ও আইনি সহায়তার জন্য থানায় যাওয়া ভুক্তভোগীকে তার প্রতিপক্ষের অনৈতিক প্ররোচনায় থানা হাজতে পুরে দেওয়াসহ নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন পেকুয়া থানার ওসি সাইফুর রহমান মজুমদার।
তাছাড়া স্থানীয় রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, ঘুষ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়া ও চিহ্নিত অপরাধীদের সাথে সখ্যতার গুরুতর অভিযোগও উঠেছে এ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে পুরো উপজেলায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন সমাজ মনে করেন বৈশ্বিক ক্রান্তিকাল করোনাতে সারাদেশের মানুষ দেখেছিলো এক মানবিক পুলিশিং।
পেকুয়া থানার সাবেক ওসি ও মানবিক ব্যক্তিত্ব কামরুল আজম অন্যন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। পুলিশিং সেবার নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছিলেন অল্প সময়ে। এতে পুলিশ আমজনতার কাছ থেকে সুনাম ও আস্থা কুড়িয়েছিলো বেশ। কিন্তু গত এক মাসে পেকুয়া উপজেলার মানুষ এর বিপরিত মেরু দেখেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২২ অক্টোবর সন্ধ্যায় উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী মাঝের পাড়া এলাকায় বসতভিটার সীমানা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে বারবাকিয়া ৩নং ওয়ার্ডের আ’লীগের সাবেক সভাপতি নুরুল আলম ও তাঁর সৎ ভাই আবুল কাশেমের স্ত্রীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী মুবিনা বেগম, শাহেনা বেগম, সাদিয়া আকতার ও কলি আক্তার জানান এ ঘটনায় উভয়পক্ষের কোন পুরুষ সদস্য উপস্থিত ছিলোনা। কিন্তু ঘটনার কয়েক ঘন্টার ব্যবধানেই কোন তদন্ত ছাড়া নিরপরাধ নুরুল আলমের বিরুদ্ধে পেকুয়া থানায় ধর্ষণ মামলা রেকর্ড হয়। আসামী করা হয় অজ্ঞাতনামা আরও ৫ জনকে।
এ মামলায় নুরুল আলমের ছোট ভাই নুর আহমদকে গ্রেফতার করে ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে কারাগারে পাঠিয়েছে ওসি সাইফুর রহমান মজুমদার। এ ঘটনায় বারবাকিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা পেকুয়া থানার ওসি সাইফুর রহমান মজুমদারের অপসারণ দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব আবুল কাশেম বলেন, বর্তমান ওসি পেকুয়া থানার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পেকুয়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। অনেক পরোয়ানাভুক্ত আসামী গ্রেফতার না করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হয়রানির মিশনে নেমেছেন তিনি। আওয়ামীলীগ কিংবা এর অঙ্গসংগঠনের পরিচয় দিলেই তাঁদের হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। তাছাড়া সাধারণ মানুষও থানা প্রশাসনের উপর খুবই বিক্ষুব্ধ।
এদিকে গত ১৭ অক্টোবর মগনামার মুহুরিপাড়ার নুরুল হোছনের ছেলে ও মগনামা ২ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নেজাম উদ্দিন ছোটনের সাথে একই এলাকার নুরুল হকের ছেলে শহিদুল্লাহর মুঠোফোনে কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পরেরদিন ছাত্রলীগ নেতা ছোটন পেকুয়া থানায় গিয়ে আইনি সহায়তা চাইতে গেলে তাকে থানা হেফাজতে পুরে দেয় ওসি সাইফুর রহমান মজুমদার।
এঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আলমগীর বলেন, নেজাম উদ্দিন ছোটনকে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে থানায় জিডি করতে গেলেই তাকে পেকুয়া থানার ওসি থানা হাজতে আটকে রাখে। মগনামার প্রভাবশালী একটি পক্ষের নির্দেশে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে শহিদুল্লাহর ভাই আবদুল্লাহকে থানায় ডেকে তার এজাহার জমা নিয়ে মামলা রেকর্ড করে। এ মামলায় ছাত্রলীগ নেতা ছোটনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করে। যা খুবই নিন্দনীয় একটি ঘটনা।
ছাত্রলীগ নেতা নেজাম উদ্দিন ছোটনের বড় ভাই মো. হালিম বলেন, আমার ভাই ষড়যন্ত্রের শিকার। তাকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে আইনি সহায়তা পেতে থানায় গিয়েছিলো। কিন্তু কোন ক্ষমতাবলে উল্টো তাকে জেল হাজতে পাঠানো হলো তা আমার জ্ঞানে আসেনা।
এদিকে গত ২০ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে উপজেলার টইটং ইউনিয়নের হাজ্বী বাজারের একটি দোকানে ক্রীড়ামোদী জনসাধারণের সাথে খেলা দেখছিলেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাচ্চু। এসময় পেকুয়া থানার এএসআই তৌহিদুল ইসলাম পাটোয়ারী বাচ্চুসহ ব্যবসায়ীদের সড়কে এনে কান ধরে ওঠবস করান। এসময় প্রতিবাদ করায় যুবলীগ নেতা বাচ্চুকে গালিগালাজ করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এ ঘটনায় উপজেলার রাজনৈতিক ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ ঝেড়েছেন। ইতোমধ্যে এর প্রতিবাদে ব্যবসায়ী সংগঠন ও রাজনীতিবিদরা মানববন্ধন করেছেন।
টইটং ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাচ্চু বলেন, পুলিশ জনগণের সেবক। জনসাধারণকে সেবার পরিবর্তে তাদের এমন মানহানিকর আচরণ অনভিপ্রেত। যা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পেকুয়া থানার ওসি সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবে অনৈতিক সুবিধা আদায় করতে না পেরে স্থানীয় একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার শুরু করেছে। আমার বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।
এব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) তফিকুল আলম বলেন, বিষয় গুলো আমি খতিয়ে দেখবো। সত্যতা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ওসি প্রদীপ কাণ্ডে কক্সবাজার জেলা পুলিশের ১৩৪৭ সদস্যকে বদলির পর ২৬ সেপ্টেম্বর পেকুয়া থানায় নতুন ওসি হিসেবে যোগ দেন সাইফুর রহমান মজুমদার। যোগদান পরবর্তী পেকুয়ার মানুষকে পুলিশি সেবা পেতে ইতিবাচক আশ্বাস দিলেও বাস্তবে এর বিপরিতটাই হচ্ছে বলে মত দিচ্ছেন পেকুয়ার সর্বস্তরের জনসাধারণ।
পাঠকের মতামত: